আজ হঠাৎ করেই কুয়েতের কথা মনে পড়লো। ২০১২ সালের মার্চে সপ্তাহ দেড়েকের জন্য যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো, সেখানে। দেশটিতে আছেন কয়েক লাখ বাংলাদেশী। তাদের আয় রোজগার ভাল। দীর্ঘদিন কুয়েত নতুন বাংলাদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ রাখায় পুরনো কর্মীদের বেতন বেড়েছে। আগে যেসব কর্মী ২০/২২ কুয়েতি দিনার (১ কুয়েতি দিনার = প্রায় ৩০০ বাংলাদেশী টাকা) বেতন পেতেন এখন তাদের কারও কারও মাসে বেতন ৮০/১০০ দিনার। থাকা খাওয়া বাদে এমন ভাল বেতনে তাদের সঞ্চয়ও ভাল। কুয়েতে ৯দিন থাকা অবস্থায় একেবারে উচ্চবিত্ত প্রবাসী থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমিকদের সাথে মেশার সুযোগ ছিল। কুয়েত সিটির পাঁচতারা হায়াৎ হোটেলে যেমন খাবার সুযোগ হয়েছে, তেমনি আবদালীর তে-খামারে গিয়েও বাংলাদেশীদের সাথে খেয়েছি। সবার মনই অদ্ভুদ এক মমতায় ঘেরা। যেমন শহীদ ইসলাম পাপুল। কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি মারাফী কুয়েতিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। নিজের চেষ্টায় আরবের এ দেশে প্রতিষ্ঠার শীর্ষে এই বাংলাদেশী। তার কারবার দেখেও অবাক হয়েছি। কুয়েত সিটির পরিছন্নতার জন্য তার কোম্পানি ইতালী থেকে ৩০০ অত্যাধুনিক গাড়ি এনেছে। বিশাল ইয়ার্ড। ৭/৮ হাজার কর্মীর প্রতিষ্ঠান। সেখানে বাংলাদেশীদের পাশাপাশি কর্মী আছে বৃটিশ, আমেরিকান, কুয়েতি, ভারতীয়সহ নানান দেশের। প্রতিষ্ঠিত এ বাংলাদেশীকে কুয়েতের প্রায় সবাই এক নামে চেনে। তিনিও সময় দিয়েছেন। পজেটিভ অনেক স্বপ্নের কথা বলেছেন, দেশ নিয়ে। প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আলম, শহীদ ইসলামের বড়ভাই। এক বন্ধুর ভাগ্নি জামাই হবার সুবাদে তাকে ডেকেছি মামা। বিএনপি’র কুয়েত শাখার সাধারণ সম্পাদকও তিনি। সংগঠনের জন্য মরিয়া। কুয়েতে থাকার ক’দিন ঘুরিয়ে দেখালেন অনেক জায়গা। বলতে গেলে তার তত্বাবধায়নেই বেশ সুন্দর কয়েকদিন দিন কাটলো। কুয়েতে বাংলাদেশী দুই জোড়াবন্ধু শাহাবুদ্দিন-জাহাঙ্গীরের। শহরের কেন্দ্রস্থলে তাদের দু’জনেরই ব্যবসা। শাহাবুদ্দিন ভাই এশিয়ান কার্গো নামের একটি প্রতিষ্ঠান আর গ্রোসারী শপের মালিক। বেশ প্রতিষ্ঠিত। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের কারবার জমি ইজারা নিয়ে বিস্তৃর্ন এলাকাজুড়ে সবজি চাষাবাদ। করলা, শসা, বেগুন, মুলা, ধনেপাতা ধরনের বাংলাদেশী সবজি ফলছে কয়েক শ’ একর জমিতে। তার কারবারও ভালো। প্রবাসে বিপদেপড়া বাংলাদেশীদের পাশেও তারা দাড়াচ্ছেন, নিয়মিত। তাদের গল্প শুনতেও ভাল লাগে। যেমন মুকাই আলী। তার ব্যবসায়ীক গ্র“পের নাম এ্যাম্বেসডর। মার্কেট দোকান অনেক কিছুই আছে তার। কুয়েতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নেতা। ডায়মন্ড গ্র“পের জাহাঙ্গীর ভাইকেও দেখলাম ব্যবসায়ী মহলে প্রতাপশালী। ভালো ব্যবসা করছেন টেকনো টাওয়ারের আবুল কাশেম। এর বাইরে শ্রমিক নেতা আকরাম উদ্দিন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের, আব্দুল বারেক এবং আরও অনেকে। ছোটভাই কামরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কথা না বললে অন্যায় হবে। নিজে চাকরি করেন একটি কোম্পানির সুপারভাইজার পদে। তার চাকরি ছোট হলেও মনটা অনেক বড়। কাজ শেষ হলেই ছুটে আসতেন হোটেলে। মাঝে মধ্যেই তার মন খারাপ দেখেছি-কুয়েতে থাকা বাংলাদেশীদের নানা সমস্যা সংকট দেখে। এসব শুধু তাদের নয়, পুরো বাংলাদেশরই গর্ব। কুয়েতের বাংলাদেশীদের অনেককেই দেখেছি রাস্তায়, রেস্তরায় কিংবা অন্য কোন খানে দেখা হলেই আবেগে-ভালবাসায় জড়িয়ে ধরতেন। খুশিমনে গল্প করতেন। দেশের কথা শোনার জন্য কতোই না অস্থির হতেন তারা। আবার কুয়েত শহর থেকে দুরে কোথাও যাওয়ার পথে রাস্তায় সাধারণ বাংলাদেশী কর্মীদের ভালবাসাও অভিভূত করেছে। তারা হয়তো রাস্তার ধারে ছোট একটি দোকান দিয়েছেন। তা থেকেই খেজুর, জুস, কিংবা ফলের প্যাকেট ফল নিয়ে এসেছেন উপহার দিতে। না খেতে চাইলে মন খারাপ করেছেন। মনে পড়লে ওহাব মামা’র কথা। কুয়েতে তিনি ছিলেন গাইড এবং আমাদের অবিভাবক। আমাদের ঘোরাফেরার জন্য তার নিজের গাড়িটি নিয়ে চব্বিশ ঘন্টাই ছিলেন। আরও কতো জন এমন আদর-আপ্যায়ন করেছেন। সন্মান দিয়েছেন। ভুলে গেছি আরও অনেকের কথা।
হাজার মাইল দুরের প্রবাসে এসব মানুষের এমন ভালবাসা সত্যিই অনবদ্য, অতুলনীয়। কোন কিছুতে কি তার প্রতিদান হয় ?তারপরও শুভ কামনা- আমার দেশের গর্বের এই মানুষেরা আরও সফল হোক। আরও সার্থক হোক তাদের প্রবাস জীবন…
কেরামত উল্লাহ বিপ্লব
Read more: http://www.kurigramlive.com/10632#ixzz4US2wtVJP