মৃত্যুই কে সবশেষ। তা মনে করে না কেউ কেউ। মৃত মানুষের বা লাশেরও দাম আছে। সেও গুরুত্বপুর্ন তার স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কাছে। তাই স্বজনের সেই লাশটি কবর না দিয়ে পরিবারের সাথে ঘরেই রেখে দেয়া হয়। তাকে দেয়া হয় খাবার দাবারও। এমন করেই চলছে বছরের পর বছর।
আজব এ ঘটনা ইন্দেনেশিয়ার তেরাজন এলাকার এক প্রত্যান্ত গ্রামে । সেখানকার পুরনো প্রথাই এটি। পরিবারের কারও মৃতদেহ নিয়ে তাদের ভাবনা-চিন্তাই আলাদা। সেখানে কারও মৃত্যু হলে তার শেষকৃত্য হতে সময় লাগে। আন্তর্জাতিক বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, প্ল্যানেট চ্যানেলের মতো গণমাধ্যমে সম্প্রতি তেরাজনের এই অদ্ভুদ রীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট ও প্রতিবেদন প্রচার হয়েছে। যার শিরোনাম লিভিং উইথ ডেডবডি।
তাতে দেখা যাচ্ছে। পরিবরের সবাই বেশ মজা করে বসার ঘরে বসে অড্ডা দিচ্ছে, কফি পান করছে। তার পাশেই এক বিছানাই নিথর শুয়ে আছেন একজন। তার কোন নড়াচড়া নেই। তার শরীর শুকনো, মুখ খসখসে ফ্যকাশে। মুখে অনেক কুচকানো, কালো কালো দাগ। শরীরে অনেক কাপড় পেচানো ওই মানুষটি আসলে একটি মৃতদেহ। ১২ বছর আগে মৃত ওই স্বজনকে নিয়েই দিন-রাত কাটাচ্ছেন তারা। লাশ হলেও পরিবারের বৃদ্ধ ওই মানুষটি তাদের সাথে আছেন আর সবার মতই । তাকে মৃত মনে করা হচ্ছে না। দিনে তার সামনে দু’বেলা খাবার দেয়া হচ্ছে। এমনকি তার বাথরুম সারার জন্যই একটি পাত্র রাখা হয়েছে ঘরের কোনে।
তেরাজনে এমন প্রথায় বাড়ি বাড়ি মৃতদেহ সংরণ করা হয়। মৃত্যুর পর জাঁকজমক আয়োজনে তার শেষকৃত্য হয়। আত্মীয়স্বজনরা আসেন। দাওয়াত খান । তারপর বিশেষ কৌশলে হারবাল ও প্রাকৃতিক নানা ওষুধে সংরণ করা হয় মৃতহে। বেশিরভাগ সময়ই ওই মৃতদেহ সুন্দর এক কফিনে সাজিয়ে রাখা হয় ঘরে। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে সেই কফিন খুলে মৃতদেহ বের করে তার সাজ পোশাক বদলানো হয়। ওই ডেডবডির সাথেই আড্ডা দেন পরিবারের সদস্য আর অতিথিরা।
আশ্চর্য এই প্রথা অবশ্য তেরাজনের গ্রাম থেকে এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে।